Breaking

Tuesday, August 16, 2022

নতুন নিয়মে যেভাবে করবেন জন্ম নিবন্ধন

দেশে জন্মনিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। তবে আশার খবর হলো-শিশুদের জন্মনিবন্ধনে লাগবে না মা-বাবার সনদ। মা-বাবার জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করে নিয়ম কার্যকরের দেড় বছরের বেশি সময় পর তা তুলে দিল কর্তৃপক্ষ।এখন থেকে নতুন পদ্ধতি সহজেই জন্মনিবন্ধন করতে পারবেন ।

জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা-

একজন শিশু জন্মের পর তার প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হচ্ছে জন্মনিবন্ধন সনদ। জন্মগ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যেই শিশুর জন্মনিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। শিশু জন্মের পর সময়মতো জন্মনিবন্ধন না করলে নানান সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বয়স প্রমাণ সেসব ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন কার্ড প্রদর্শন বাধ্যতামূলক-

পাসপোর্ট ইস্যু, স্কুলগুলে ভর্তি, বিবাহ নিবন্ধন,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি,সরকারী, বেসরকারী স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদান,ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু,ভোটার তালিকা প্রণয়ন,জমি রেজিষ্ট্রেশন,ব্যাংক একাউন্ট খোলা,আমদানী বা রপ্তানী বা উভয় লাইসেন্স প্রাপ্তি,:গ্যাস, পানি, টেলিফোন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি,করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি,ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি,বাড়ির নক্সা অনুমোদন,গাড়ি রেজিষ্ট্রেশন,ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি,জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি,বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ,শিশু শ্রম প্রতিরোধ

আরো পড়ুন: সার্টিফিকেটের ভুল সংশোধন করবেন যেভাবে

যেভাবে করবেন জন্মনিবন্ধন

বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে  জন্মনিবন্ধন আইন প্রণয়ন করলেও ২০০৬ সাল থেকে তা কার্যকর করা হয়। আইন অনুযায়ী সব নাগরিকদের জন্য জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। তবে কোন পদ্ধতিতে বা কীভাবে শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে হবে তা অনেক অভিভাবকেরই অজানা। বাংলাদেশে সশরীরে অথবা অনলাইনে দুভাবেই জন্মনিবন্ধন করা যায়।তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক যে ভাবে করবেন জন্মনিবন্ধন-

সশরীরে জন্মনিবন্ধন করবেন যে ভাবে

 সশরীরে জন্মনিবন্ধন করতে চান তাহলে আবেদনকারীকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখান থেকে জন্মনিবন্ধনের ফরম তুলে তা পূরণ করতে হবে। জন্মনিবন্ধনের কার্যালয়গুলো হচ্ছে-

** ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা সরকারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা।

** পৌরসভার মেয়র অথবা তার অধীনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর।

** সিটি করপোরেশনের মেয়র অথবা তার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

** ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট অথবা তার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা।

** বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত।

ফরম সংগ্রহ: জন্মনিবন্ধনের প্রথম ধাপ হচ্ছে নির্দিষ্ট ফরম সংগ্রহ করা। আবেদনকারীকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কার্যালয় থেকে ফরম সংগ্রহ করতে হবে।

ফরম পূরণ: দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে নির্দিষ্ট ফরমটি পূরণ করা। নং ঘরে শিশুর নাম, জন্মতারিখ, জন্মস্থান, লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে। এখানে জন্ম তারিখটি উপরের ঘরে সংখ্যায় নিচের ঘরে কথায় লিখতে হবে।

বিদ্যা বার্তার সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

নির্দিষ্ট ফরমটির নং ঘরে শিশুর বাবা-মার নাম তাদের জাতীয়তা লিখতে হবে। ফরমটির নং ঘরে যথাক্রমে শিশুর স্থায়ী বর্তমান ঠিকানা লিখতে হবে। শিশুর যদি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে তাহলে নং ঘরে অসামর্থ্যতা অনুযায়ী টিক চিহ্ন দিতে হবে।

নির্দিষ্ট ফরমটির নং ঘরে আবেদনকারী অর্থাৎ শিশুটির বাবা-মা অথবা যিনি আবেদনটি করছেন তার নাম, স্বাক্ষর আবেদনকারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং আবেদনের তারিখ লিখতে হবে। নং ঘরের ক্ষেত্রে শিশুর জন্মের বছরের মধ্যে আবেদন করলে ১নং ঘরের তথ্য সংগ্রহকারীর স্বাক্ষর নিতে হবে। বছরের বেশি হলে / নং ঘরটি পূরণ করতে হবে। নং ঘর থেকে পরের ঘরগুলো আবেদনকারীকে পূরণ করতে হবে না।

ফরম জমা দেওয়া: জন্মনিবন্ধনের তৃতীয় ধাপ হচ্ছে নির্দিষ্ট ফরম জমা দেওয়া। ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করে নির্দিষ্ট কার্যালয়ে (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন বা সিটি করপোরেশন আওতাধীন ওয়ার্ড কমিশন) জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

আরো পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা : প্রস্তুতি, পরামর্শ ও খুঁটিনাটি

কুপন সংগ্রহ: জন্মনিবন্ধনের চতুর্থ ধাপ হচ্ছে কুপন সংগ্রহ করা। জন্মনিবন্ধনের নির্দিষ্ট ফরমের নিচের অংশটি আবেদনকারীর সংগ্রহে রাখতে হবে। অর্থাৎ জন্মনিবন্ধনের নির্দিষ্ট ফরমটি জমা দেওয়ার সময় ফরমের নিচের অংশটি অফিস থেকে পূরণ করে আবেদনকারীকে দেওয়া হবে। সেখানে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদানের তারিখ উল্লেখ থাকবে।

জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহজন্মনিবন্ধনের পঞ্চম ধাপ হচ্ছে জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করা। জন্মনিবন্ধনের ফরমটি জমা দেওয়ার সময় আবেদনকারীকে কুপনে যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে সে তারিখ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদটি সংগ্রহ করতে হবে।

বিদ্যা বার্তার সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

অনলাইনে জন্মনিবন্ধন করবেন যেভাবে

অনলাইনের মাধ্যমেও জন্মনিবন্ধন করতে পারবেন। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের আবেদন খুবই সহজ। বর্তমানে জন্মনিবন্ধনের আবেদন অনলাইনেই বেশি হচ্ছে।

ওয়েবসাইটে প্রবেশঅনলাইনে জন্মনিবন্ধন করতে আপনাকে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আবেদনকারী কোন এলাকা থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে চান সেটি নির্বাচন করতে হবে। শিশুর জন্ম দেশের বাইরে হলে বাংলাদেশ দূতাবাস নির্বাচন করতে হবে। আবেদনকারী যে এলাকা বা কার্যালয় নির্বাচন করবেন পরে সেখান থেকেই সনদ সংগ্রহ করতে হবে।

ফরম পূরণ : এরপর আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট ফরমটি পূরণ করতে হবে। ফরমের প্রথম অংশে আবেদনকারীর নামের দুটি অংশ (বাংলা ইংরেজি) দুভাবেই লিখতে হবে। ইংরেজিতে লেখার সময় অবশ্যই ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করতে হবে। তারপর আবেদনকারীর জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে। জন্ম তারিখের পরের দুটি ঘরে শিশুর বাবা-মার কততম সন্তান লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে। এরপর শিশুর জন্মস্থানের নাম লিখতে হবে।

এই ঘরগুলো পূরণ করা হলে নিচের ডান দিকে থাকাপরবর্তীবাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। এরপর আরেকটি ফরম দেখা যাবে। সেটি এভাবে পূরণ করতে হবে-

ফরমের প্রথম ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার জন্ম সনদ নম্বর লিখতে হবে। এরপরের দুটি ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার নাম বাংলায় ইংরেজিতে বড় অক্ষরে লিখতে হবে। পরের দুটি ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জাতীয়তা লিখতে হবে। একইভাবে নিবন্ধনকারীর মায়ের তথ্যও পূরণ করতে হবে।

বিদ্যা বার্তার সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

এই ঘরগুলো পূরণ করা হলে নিচের ডান দিকে থাকাপরবর্তীবাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। এখানে আপনার ঠিকানা লিখতে হবে। প্রথমেইআপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান?” অপশন থেকে কোনোটি নয় বাছাই করলে ঠিকানা দেওয়ার জন্য একটি পৃষ্ঠা চলে আসবে আপনার সামনে। আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা একই হলেজন্মস্থানের ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা একইঅপশনটিতে ক্লিক করুন। সেক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে ঠিকানার তথ্যগুলো চলে আসবে। অন্যথায় ঠিকানা আলাদা করে লিখুন।

ঠিকানা লেখার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। এখানে আবেদনকারীর তথ্য দিতে হবে। আবেদনকারীর সঙ্গে নিবন্ধনকারীর সম্পর্ক, আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ইমেইল জমা দিতে হবে। নিবন্ধনকারী যদি ১৮ বছরের বেশি বয়সের হন তাহলে নিজেই আবেদন করতে পারবেন।

আরো পড়ুন: ফেসবুকে প্রফেশনাল মুড যেভাবে চালু করবেন

তথ্য যাচাই :সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর আপনাকে পুনরায় তথ্যগুলো দেখানো হবে। আপনার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই করুন। কোনো তথ্য ভুল হলে তা সংশোধন করুন। এরপর সাবমিট বাটনটিতে ক্লিক করুন।

আবেদনপত্র প্রিন্ট :জন্মনিবন্ধন আবেদনটি সঠিকভাবে সাবমিট হলে আপনাকে একটি আবেদন নম্বর দেওয়া হবে। এই নম্বরটি দিয়ে আপনি সহজেই জন্মনিবন্ধনের অবস্থা জানতে পারবেন।আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করুনবাটনটিতে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে নিন।

সনদ গ্রহন: আবেদন করার ১৫ দিন পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রিন্ট করা কপিটি নিয়ে নির্দিষ্ট কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। সেখানে কাগজপত্রগুলো জমা দিলেই জন্মনিবন্ধন সনদটি আপনি পেয়ে যাবেন।

 


No comments:

Post a Comment