Breaking

Tuesday, October 4, 2022

বই পড়ার উপকারিতা

মানব সভ্যতার এক শ্বাসত ও চীর কল্যাণময় উপাদান হচ্ছে বই। একটি বইয়ের প্রভাব এতই ব্যাপক যে, একটি ভাল বই একজন মূর্খ অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্বরকেও মানবিক গুণসম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষে রূপান্তরিত করতে পারে। বই পড়লে জীবনের পরতে পরতে এর প্রভাব লক্ষ করা যায়। বই পড়ার উপকারিতা তথা বই পড়লে আমাদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়, সেগুলো হলো-

জ্ঞান অর্জন :

বই পড়লে জ্ঞান বাড়বেই। যে ব্যক্তি যত বেশি বই পড়ে তার জ্ঞানও তত বেশি বৃদ্ধি পায়। শিক্ষা ছাড়া পৃথিবী অচল কেবল মাত্র শিক্ষাই পারে অন্ধকার পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলতে। আর এই শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করতে হলে বই এর বিকল্প কোন কিছু নেই। বই পড়ার অন্য আরেকটি বড় উপকারিতা হচ্ছে নতুন কিছু জানতে পারা বা জ্ঞান অর্জন করা। বর্তমান, অতীত,ইতিহাস সকল কিছুই বইয়ের ভিতরে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়।

শারীরিক ও মানসিক উন্নতিতে বইয়ের গুরুত্ব :

বই হচ্ছে মানুষের মনের তথা আত্মার খোরাক। বই পরলে মানুষের জিবনে শাররীক ও মানসিক উন্নতি ঘটায়। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে বইয়ের যতই গল্প রহস্যের গভিরে প্রবেশ করে ততই মানুষের ব্রেন এর কোষগুলো উদ্দীপনা তে ভরপুর হয়ে উঠে। এতে করে স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ব্রেইন ও সার্ফ থাকে। যখন মানুষ মানসিক দিক থেকে ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তায় ভোগে তখন এর জন্য সহজ সমাধান হচ্ছে বই পড়া। বই পড়লে তাৎক্ষনিক ভাবেই ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা যায়। নেগেটিভ কথা, নেগেটিভ চিন্তা, হিংসা,প্রতিশোধের স্পৃহা তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে না বিধায় হতাশা দূর হয়ে যায়।

স্মৃতি শক্তি বা কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি :

যখন আমরা কোন বই পড়া শুরু করি তখন আমাদের মনের মধ্যে বইয়ের ভিতরে লিখা থাকা কাহিনীর এক প্রতিছবি ভেসে উঠে চোখের সামনে। এতে করে বিষয় টি মনের ভিতরে গেথে যায় এবং চোখে চোখে ভেসে উঠবে মনে হবে যে বাস্তব জিবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা চকের সামনে খেলা করছে। বই পড়লে যে স্মৃতি শক্তি বাড়ে তা এক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে যখন আমরা ৪০০ কিংবা ৫০০ পাতার একটি বই পড়তে শুরু করি তখন শুরু দিকে যাকে উদ্দেশ্য করে লিখা হয়েছে তার জীবনির কিছু অংশ লিখা থাকে যাতে ঐ ব্যাক্তির সম্পর্কে আমাদের আকর্ষণ কিছুটা বৃদ্ধি করে। যা পরবর্তিতে ধীরে ধীরে যত শেষের দিকের কিছু পাতায় বলা থাকে তাঁর আবিষ্কৃত ফর্মুলা এবং তাঁর দেওয়া কিছু অমুল্য জীবন বাণী। বইয়ের শুরু পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যে চেইন দেওয়া থাকে তা স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ঠ উপকারি।

লিখা ও সৃজনশীলতার ক্ষমতা বাড়ায় :

বই পড়লে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারে শিখতে পারে যা লিখার জন্য বেশ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। লিখার জন্য জানতে হবে বুঝতে হবে আপনি কোন বিষয়ে লিখতে যাচ্ছেন বা কি প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। যিদি আপনার উক্ত বিষয়ের উপরে ধারণা থাকে তাহলে এর সাথে আরো নতুন কিছু নিজের থেকে সৃষ্টি করে গুছিয়ে লিখা যায়।

ঘুমে সাহায্য করে :

গুমের জন্য সবচেয়ে বড় মেডিসিন হচ্ছে বই পড়া। যাদের কিছুতেই ঘুম আসে না তার জন্য ঘুমের ওষুধ না খেয়ে কিছুক্ষন বই পড়ুতে থাকলে কখন যে ঘুমিয়ে পরবে। বই পড়া হল ঘুমের সবচে বড় ওষুধ। বই পড়লে মানসিক, শারীরিক উন্নতি হয়, হতাশা দূরে সরে যায়, স্ট্রেস কমে যায়। হতাশা আর স্ট্রেস যদি জীবন থেকে সরে যায়,স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের গড় আয়ু তো বাড়বেই।

একাগ্রতা বাড়ে :

আমরা যখন কোনো একটি কাজ খুব মন দিয়ে করি তখন আমাদের পুরো ধ্যান সেই কাজটির উপরেই টিকে থাকে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আমরা অনেক চেষ্টা করলেও সেই কাজটিতে মন লাগাতে পারিনা। এর কারণ আমাদের মধ্যে একাগ্রতার কমি থাকা। তাই আমরা যখন কোনো বিষয়ের বই পড়ে থাকি যেমন কোনো মহান ব্যক্তির জীবনী বা জীবনে সফল হওয়ার উপায় ইত্যাদি, তখন বই পড়ার সময় আমাদের পুরো ধ্যান বইয়ের প্রত্যেকটি শব্দের এবং বাক্যের উপর থেকে থাকে। এর ফলে ধীরে ধীরে আমাদের একাগ্রতা প্রচুর পরিমানে বাড়তে শুরু করে। আর, একাগ্রতা বাড়লে আমারা যেকোনো কাজ অনেক ধ্যান দিয়ে করতে পারি এবং আমাদের কার্য্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাহলে, একাগ্রতা বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রতিদিন বই পড়া অবশই দরকার।

একাকীত্ব দূর করে :

বইই আমাদের প্রকৃত বন্ধু বলা যায়, কারণ বই একমাত্র বন্ধু যা কোনোরকম স্বার্থ ছাড়া আমাদের মন-ভালো করে দিতে সাহায্য করে থাকে।কিন্তু বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের সাহায্য নিয়ে আমরা নিজের একাকীত্ব দূর করতে চেষ্টা করে থাকি যদিও এর অধিক ব্যবহার আমাদের একাকীত্ব আরো বাড়িয়ে তোলে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকেই স্মার্ট ফোনে অধিক সময় না কাটিয়ে বই পড়াতে সময় দেওয়া দরকার। যখনি একা লাগে বা কথা বলার জন্য কেউ পাশে থাকেনা, তখন আমাদের নিজের পছন্দের কোনো বই পড়া দরকার। এর ফলে কিছু সময় হলেও মাথা থেকে একাকীত্ব ভাব দূর হয়ে আমাদের মুড পরিবর্তন হয়ে যায় এবং মস্তিস্ক শিথিল করে থাকে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকেই একাকীত্ব দূর করার জন্য প্রতিদিন বই পড়া দরকার।

মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে :

বই পড়ার অভ্যাস আমাদের মনে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। আমরা যখন কোনো বই পড়ে থাকি সেখানে লিখা কাহিনী বা চরিত্রের বিষয় গুলো আমরা অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আর সেই কাহানি বা চরিত্র আমাদের অনেকদিন পর্যন্ত মনে থেকে যায়। তাই প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয়ে বই পড়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক নতুন নতুন তথ্য পেতে থাকে ফলে আমাদের মনে রাখার এবং মনে করার ক্ষমতা দিন দিন বাড়াতে শুরু করে।এই অভ্যাসটি আমাদের মস্তিষ্ককে আরো অধিক সক্রিয় এবং কার্য্যকর করে তুলতে সাহায্য করে থাকে।ফলে যেকোনো জিনিষ মনে রাখাটা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে পড়ে।

সকরাত্মকভাব বিকাশ হয় :

বর্তমান সময়ের স্ট্রেশফুল জীবনে বিভিন্ন ধরণের-চাপের ফলে আমাদের মনে অনেক রকম নকরাত্মক বিচার জন্মায়। কেউ পড়াশুনা নিয়ে চাপে থাকে, কেউ চাকরি নিয়ে চাপে থাকে এছাড়া অনেক সময় যখন কাজ গুলো সঠিক ভাবে হয় না তখন আমাদের মনে বিভিন্ন ধরণের নকরাত্মক (negative) বিচার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা যদি সফল ব্যক্তিদের জীবন সংগ্রামের বই গুলো পরে থাকি তখন আমাদের মনে সকরাত্মক ভাব বিকাশ পেয়ে থাকে এবং আমরা অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকি। এই সকরাত্মক ভাবই আমাদের যেকোনো পরিস্থিতির সমস্যা সহজভাবে সমাধান করতে সাহায্য করে থাকে। জীবনে চলার জন্য সকরাত্মক ভাব থাকা খুবই জরুরি আর তাই এর জন্য ভালো মানের অনুপ্রাণিত বই পড়া প্রয়োজন।

লক্ষ্য পূরণে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় :

আমাদের সকলেরই জীবনে ছোট-বড় কোননা কোনো লক্ষ্য অবশ্যই থাকে এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে আমাদের আত্মবিশ্বাসের প্রচুর দরকার পড়ে । আর লক্ষ্য পূরণ করতে বইয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, কারণ বই আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে। আমরা যত সফল ব্যক্তিদের জীবনী ইত্যাদি পড়বো তখন আমাদের মনে লক্ষ্যের বিষয়ে ততবেশি জ্ঞান বাড়বে, এর ফলে আমাদের লক্ষ্য পূরণ করার আত্মবিশ্বাস আরো বেশি দৃঢ় হয়ে পরবে। অনেক সময় দেখা যায়, লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের পথে অনেক বাধা এসে থাকে। কিন্তু বই পড়ার অভ্যাস সেই বাধা গুলো অতিক্রম করার সাহস দিয়ে থাকে এবং নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে।তাই লক্ষ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে মনে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার জন্য ভালো ভালো বই পড়া খুবই দরকার।

শব্দ ভান্ডার বাড়াতে সাহায্য করে :

বই পড়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে আরো একটি উপকার হলো, এর মাধ্যমে আমাদের শব্দের ভান্ডার বাড়িয়ে তোলা। যখন আমরা নতুন নতুন বিষয়ে পড়ি তখন সেখানে অনেক অজানা শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় হয় যেগুলি আমরা আগে শুনে থাকিনা। ফলে আমরা অনেক নতুন নতুন শব্দ গুলো শিখতে পারি এবং এর বিভিন্ন অর্থ জানতে পারি। এই শব্দ গুলোর প্রয়োগ করে আমরা মূল্যবান বাক্য বানাতে পারি যেগুলো আমাদের কর্মজীবনে স্পষ্টবক্তা হিসাবে কথা বলতে কনফিডেন্স দিয়ে থাকে। এর ফলে আমরা নিজের মনের কথা গুলো অন্যদের সামনে সুন্দর করে তুলে ধরতে সক্ষম হয়ে থাকি। তাই অধিক থেকে অধিক নতুন-নতুন শব্দ গুলো জানার দারুন উপায় হলো প্রচুর বই পড়া।

যোগাযোগ স্থাপন :

যোগাযোগ আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্র যা শুধু বই পড়ার মাধ্যমেই প্রেরণ করা যায়। যারা বই পড়ে তারা খুব সহজেই অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। তারা জানে কোন পরিস্থিতিতে কি কথা বলতে হয় এবং কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়। যারা বই পড়ে না তারা অনেক বিষয়েই সচেতন নয়। যারা কিছুই জানে না তাদের আসলে অন্যকে বলারও কিছু থাকে না।

সমাজে চলতে গেলে যোগাযোগ এর কোন বিকল্প নেই। বই পড়া যেমন তোমার জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে সাহায্য করবে, তেমনি তোমাকে ভালো সংবাদদাতা হতেও সহায়তা করবে। বই পারবে তোমাকে পৃথিবীর সংগে যুক্ত করতে।

বই আত্মন্নোতিতে সাহায্য করে :

বই পড়া নিজেকে এক উন্নত আমি গঠনে সহায়তা করে। বই পড়ার মাধ্যমেই নিজেকে এক নতুন পৃথিবীতে আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। বই পড়ার মধ্য দিয়েই নিজের অন্তরদৃষ্টির একটি সুগঠিত পন্থা এবং ভবিষ্যতের উত্তম কর্ম নির্ণয় করতে শক্তিতে রুপান্তর করে।

“Reading is to the mind, what exercise is to the body” – এই কথাটির মধ্যেই বই পড়ার গুরুত্ব বোঝা যায়। ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ এবং প্রফুল্ল রাখতে পারি। আসলে বই পড়ার আনন্দ কখনোই শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয় এটি শুধু অনুভব করা যায় অভিজ্ঞতা দ্বারা।

No comments:

Post a Comment